অবতাক খবর, সংবাদদাতা ::  তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ও পেশাদার ভোট কৌঁসুলি পিকে র সাথে বৈঠকের পর সমস্যা মিটে যাওয়ার বার্তার 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুভেন্দু অধিকারীর ফের বিদ্রোহী বার্তা। পরিস্কার করে তিনি জানিয়ে দিলেন “এক সঙ্গে আর কাজ করা সম্ভব নয়”।

রাজ্যের সদ্য-প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তিনি তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ ও মধ্যস্থতাকারী প্রবীণ নেতা সৌগত রায়ের কাছে টেক্সট মেসেজ করে “একসঙ্গে আর কাজ করা সম্ভব নয়” বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তার এই টেক্সট মেসেজ এরপর রাজ্যে ফের নতুন করে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথার পর শুভেন্দু বাবু প্রবীণ সাংসদ ও তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের আহ্বানে তৃণমূলের যুব সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পেশাদার ভোট কৌঁসুলি প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই আলোচনায় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিত হন। ঘণ্টা দুয়েকের এই আলোচনা দুই প্রবীণ সাংসদ দের উপস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী যেসব দাবিও অভিযোগ ছিল সবটাই সোনা হয়। পরে সৌগত রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে আলোচনা পর্বে শেষ দিকে শুভেন্দু কে নিয়ে বৈঠক হয়েছে বলে ফোনে বার্তা দেন। তিনি জানান সবটাই পজেটিভ আলোচনা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী কে এই বার্তা দেওয়ার পর সৌগত রায়ের মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। সৌগত রায়ের কথা অনুযায়ী শুভেন্দু অধিকারীর কে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সবটাই আলোচনা হয়েছে। সমস্যা মিটে গেছে। শেষে সেই স্পিকারফোনে মুখ্যমন্ত্রী নাকি সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন।

এই পর্ব শেষ হতেই শুভেন্দু অধিকারী কোন কথা না বলেই তার বাড়ি ফিরে যান। তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে ও মুখ খোলেননি। তবে তার মুখ খোলার আগেই তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ঐকের বার্তা শুরু করে দেন। সৌগত রায় নিজেই জানান যে শুভেন্দু বাবু দলে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। সব সমস্যা মিতে গেছে। তিনি আরো জানান যে মুখ্যমন্ত্রীর তাকে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন এবং শুভেন্দু বাবুও তৃণমূলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে শুভেন্দু বাবুর মুখ খোলার আগেই যেভাবে মিডিয়াতে দরকষাকষির, সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়ে, তাতেই বিভিন্ন নেতা-নেত্রীরা বয়ানবাজি শুরু করে দেন। শুভেন্দু বাবুর হয়ে যারা তৃণমূলের সঙ্গে বিক্ষোভ করেন, বিরোধ করে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন তারা অনেকেই ভেঙে পড়েন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে তার জন্য যারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন ও দলের নেতাদের কাছে গাদ্দারের তকমা পেয়ে গেছেন তারা দলে ফের কোন মুখে ফিরবেন।আর যদি ফেরেনও তাহলে তারা কি সেই পুরোনো জায়গা পাবেনকি?

শুভেন্দু অধিকারীর জন্য রাস্তায় নামার কারণে ও তার সভায় দলের বিরুদ্ধে গিয়ে যোগদান করার অভিযোগে অনেকেই পদ হারাতে হয়েছে। কারোর ব্যক্তিগত সুরক্ষা তুলে নেওয়া হয়েছে । কাউকে পৌর প্রশাসক এর পদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। আবার জেলায় জেলায় তার হয়ে মুখ খোলার জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অনেকে। তাদের কথা না ভেবে শুভেন্দু বাবু এভাবে আলোচনার পর এক সঙ্গে চলতে রাজি হলেন কেন এ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দেয়। মোটকথা শুভেন্দু বাবুর অনুগামীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখতে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে যে বিরোধী দলের নেতারা শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে ভীষণ উৎসাহিত ছিলেন তারাও শুভেন্দু পর্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দেন। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান সময়ের অপেক্ষা বলে যারা দাবি করেছিলেন সেই বিজেপির নেতারাও এখন সুর বদল করে অন্য সুর গাইতে শুরু করেন।

রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে যে হাইক তৈরি হয়েছিল তার পারদ দ্রুত নিচে নামতে শুরু করে দেয়। তাকে নিয়ে কটাক্ষ কটূক্তি ও পাড়ায়-পাড়ায় দলের মধ্যে মজা ও হাসাহাসি শুরু হয়ে যায়।

জেলায়-জেলায় পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূল কর্মী নেতাদের আলোচনা করতে শোনা যায় যে শুভেন্দু অধিকারীকে লেজেগোবরে করে দিল দল। কারণ যে শুভেন্দু অধিকারী পিকে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ছিলেন, তিনি সেই পিকে ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে দিয়েছিলেন, সেই শুভেন্দু অধিকারী অবশেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোট কৌশলী পিকের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন।

এই সব খবর ও আলোচনার আঁচ শুভেন্দু কানে পৌঁছে যায় আর তিনি বুঝতে পারেন যে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি যেভাবে রাজ্য রাজনীতিতে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন, বৈঠকে বসে তিনি সেই সম্মান খুইয়ে ফেলেছেন। তাকে নিয়েছে মানুষের মধ্যে একটি নতুন ভরসা তৈরি হয়েছিল তা এখন খানখান হতে শুরু করে দিয়েছে, তা বুঝতে দেরি হয়নি জননেতা শুভেন্দুর। তাই কাল বিলম্বনা করে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে মুখ্যমন্ত্রী যে একসঙ্গে চলার কথা বলেছেন তা মেনে চলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি টেক্সট মেসেজ বার্তায় মধস্ততাকরি তৃণমূল নেতা ও সাংসদ সৌগত রায়কে জানান যে “একসঙ্গে  আর কাজ করা সম্ভব নয়”।

শুভেন্দু অধিকারীর এক বাক্যে বার্তা, বঙ্গ রাজনীতিকে ফের নতুন করে ধোয়াসা তৈরি করে দিল। শুভেন্দু বাবু মুখ্যমন্ত্রীর 7 তারিখের সভার একদিন আগে তার অবস্থান নিয়ে মুখ খোলার কথা বলেছিলেন। এখন একবার ফের শুভেন্দু পর্ব নিয়ে তৃণমূল নতুন করে পারদ চডতে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।