অবতক খবর, ইসলামপুর: ভারতবর্ষে প্রথম লোক আদালতে যে রূপান্তরকামী বিচারক হয়েছিলেন সেই জয়িতা মন্ডলকে নিয়েই রাজধানীতে তৈরি তথ্যচিত্র মুক্তি পাচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন।”আই এম জয়িতা”নামে ওই তথ্যচিত্রের মূল চরিত্র যে মানুষটি তিনি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর শহরের বাসিন্দা।এ যেন একটি পুরুষ চরিত্র থেকে ধীরে ধীরে নারী হয়ে যাওয়ার এক অগ্রন্থিত জীবন কাহিনী এবার চাক্ষুষ দেখতে পাবে বিশ্ববাসী।কিভাবে জয়ন্ত মন্ডল নামে এক পুরুষ জয়িতা মন্ডল হয়ে যায় ,তা চাক্ষুষ না দেখলে এই কাহিনীর অনেকটাই বুঝি বাদ থেকে যাবে। যে কাহিনীতে ঠাঁই পেয়েছে রূপান্তরকামীর তকমা লাগানো একটি মানুষকে প্রতিটি ক্ষেত্রে হাজারো সামাজিক বাধা বিপত্তি পেরিয়েও কিভাবে সাফল্যের শীর্ষে ওঠা যায়।
সামাজিকতার সিঁড়ি বেয়ে কিভাবে লোক আদালতের চেয়ারে বিচারক হিসেবে বসা যায়।কীভাবে সমাজের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।ওই তথ্য চিত্র বুঝি সে কথাই বলবে।কারণ প্রত্যন্ত এলাকা ইসলামপুরের রূপান্তরকামী ওই মহিলা কিভাবে ভারতবর্ষের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা তুলে ধরা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে।তথ্যচিত্রের পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্ত জানান,”আই এম জয়িতা” নামে তথ্য চিত্র নির্মাণ কাজ শেষ করতে তাকেও প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে।বরাবরই ব্যতিক্রমী বিষয় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি। যে বিষয় হয়তো সাধারণ মানুষের অনেকেই মেনে নেবেন না। তাই ভারতবর্ষের প্রথম রূপান্তরকামিকে নিয়ে তার এই তথ্য চিত্রের পরিকল্পনা। দীর্ঘ দিনের শুটিং শেষ হয়েছে। তবে তথ্যচিত্রটি নিয়ে তিনি যথেস্ট আশাবাদী।
ভারত বর্ষ ও বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম হইচই এ রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন প্রকাশ হবে এই তথ্যচিত্র।” আই এম জয়িতা”। ওই তথ্যচিত্রের মূল কেন্দ্রবিন্দু জয়িতা। তিনি ইতিমধ্যেই এই জেলা তো বটেই রাজ্যের কাছে একজন পরিচিত মুখ।এইচআইভি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাজ সচেতনতা মূলক কাজ করছেন তিনি।গোটা দেশের রূপান্তরকামী, সমকামী এবং হিজড়ে সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।তাদের সামাজিক সুরক্ষা, সাংস্কৃতিক বিকাশ ও নিরাপত্তা নিয়েও একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি।এলাকার বিশিষ্ট জনের তালিকায় তার নামও যোগ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রথম রূপান্তরকামী ভোটার হিসেবে তিনিই নাম লিখিয়েছেন জেলার ইতিহাসে।তিনি জানান,একাধিকবার লোক আদালতের বিচারকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি হাসি মুখেই।তার ভূমিকায় খুশি আদালতের অন্যান্য বিচারকরাও।বাড়ি থেকে বের হয়ে ব্যতিক্রমী এই লড়াই তাকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে আজও। সেই স্বীকৃতিই এই তথ্যচিত্র। ইসলামপুরে জয়িতার নিজস্ব জায়গায় ,তার কর্মক্ষেত্রে এমনকি আদালতে কলকাতায় ওর বাড়িতেও চিত্র গ্রহণের কাজ হয়েছে।এ বিষয়ে তিনি ভীষণ খুশি।কারণ তাকে নিয়ে কোনোদিন যে তথ্যচিত্র নির্মাণ হবে এটা তিনি কখনোই ভাবতেই পারেননি।এটিই বুঝি রূপান্তরকামীদের কাছে একটি আশার আলো হয়ে উঠবে।সেই আশাতেই ভরসা রেখে আরও অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে জয়িতাকে।তাই আবারও বিরামহীন পথ চলা।