শ্রমজীবী মানুষই এই সভ্যতার নির্মাণশিল্পী,সেই দৃশ্যমান বিশ্বকর্মা: তাঁকে প্রণাম
বিশ্বকর্মার সঙ্গে দেখা
তমাল সাহা
বিশ্বকর্মা কর্মকার,
পাতলা মাঝারি মাপের মানুষ।
ডান হাতের বুড়ো আঙুল
আর তর্জনীতে কড়া পড়ে গিয়েছে।
সবাই চেনে বিশ্বকর্মা দা-কে।
প্রতিদিন গান্ধী মোড়ে
পুরসভার পুরনো ট্যাপ কলের পাশে
ট্যাঙ্কের গায়ে ঠেস দিয়ে,
তিন ফুট বাই দু ফুট জায়গা নিয়ে বসে।
বিশ্বকর্মা দা
লজঝড়ে একটা সাইকেল করে
গয়েশপুর থেকে আসে।
একটা ঝোলা ব্যাগেই তার সম্পত্তি
ধরে রাখা আছে।
বিশ্বকর্মা দার দুজোড়া পোশাক—
একটি ফুলপ্যান্ট ও শার্ট,
সেটা পরে সে কাজে আসে।
যখন কাজে বসে
একটা খাকি হাফ প্যান্ট ও
হাফ হাতা গেঞ্জি গায়ে থাকে।
দুটোই হাফ কেন?
ফাইল দিয়ে চাবির খাঁজ
ঘষতে ঘষতে সে বলে,
দুটো হাফ মিলে একদিন ফুল হয়ে যাবে!
ভারি সুন্দর কথা বলে বিশ্বকর্মা দা।
বিশ্বকর্মা দার পঞ্চায়ুধ—
একটা হাতুড়ি,ছেনি,নেহাই,প্লাস জাতীয় একটি যন্ত্র আর ফাইল–
এ নিয়ে সে জীবন যুদ্ধে মেতেছে।
একটা মোটা তারের রিং,
তার মধ্যে ধরা আছে
অসংখ্য ছোট বড় বিভিন্ন চাবি,
কত কত নামি দামি কোম্পানির
পুরানো তালা—
রাণী ভিক্টোরিয়ার আমলের
তালাও রয়েছে বিশ্বকর্মা দার
এক চিলতে দোকানে।
বিশ্বকর্মা দা
পুরনো তালা পাঁচ মিনিটে
সারাই করে দেন,
তিন মিনিটে বানিয়ে দেন চাবি।
সে যতই কঠিন সিন্দুক,লকার,ভল্ট
হোক না কেন,
হাতের কৌশলে এক লহমায় খুলে দেন
বিশ্বকর্মা দা।
ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও সোনার দোকানের মালিকদের সঙ্গে তার খুব ভাব।
বিশ্বকর্মা দা বলেন,
সব তালাই আর খুলতে পারলুম কই?—
বলেই উদাস হয়ে যান।
গঙ্গাপারে বন্ধ সব কলকারখানা!
সেগুলো লক আউট ক্লোজার হয়ে
দিনের পর দিন পড়ে আছে,
তা খুলবার চাবি
আর কোথায় বানাতে
পারলুম?
কেন যে আমার নাম রাখা হয়েছিল বিশ্বকর্মা?
বৃষ্টিবিন্দুর মত দুফোঁটা চোখের জল
ঝরে পড়ল মাটিতে।
উষ্ণ মাটি,জল পলকে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়…