সুমনা আদক / অবতক খবর : “আছে দুঃখ আছে মৃত্যু” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর——
মৃত্যুর থেকে বড় দুঃখ আর কিইবা হতে পারে, সেই মরণব্যাধির মরণযজ্ঞ বয়েই চলছে সারা বিশ্বজুড়ে, সংবাদ পত্রের শিরোনাম জুড়ে শুধুই হাহাকার আর হৃদয়বিদারিত আর্তনাদ। COVID -19 এর কাছে হার মেনেছে দুনিয়ার একের পর এক তাবড় তাবড় দেশ। ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, ব্রিটেন সবাই একে একে আজ মৃত্যুপুরী।
ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দান আয়ারল্যান্ড যেন সর্বত্রই মরুভূমির শূন্যতা বিরাজমান। COVID-19 কেড়ে নিয়েছে অনেক তরতাজা প্রাণ, এখন শুধুই কান্নার শব্দ গোটা গ্রেটব্রিটেনের আনাচে কানাচে, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এর পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত এখানে মৃত্যুর সংখ্যাটা 26,772 র বেশি, আক্রান্ত প্রায় 1, 71, 253 জন। এরমধ্যে শুধু স্কটল্যান্ডেই মৃত্যু হয়েছে 1,475 জনের। ভয়ংকর বিভীষিকার সাক্ষী এখন ব্রিটেন, পাশাপাশি স্কটল্যান্ডও।
লকডাউন এর ফলে গোটা ইউনাইটেড কিংডম একেবারেই স্তব্ধ, স্তব্ধ এডিনবার্গও, শান্ত হলেও বেশ প্রানোচ্ছল ছিল স্কটিশদের প্রাচীন এই শহরটি। একসময়ে যার প্রস্তরে প্রস্তরে ভাস্কর্য শোভা পেলেও, আজ সেই পাথরের দেওয়ালে শুধুই শ্যাওলার বাসা। নেই কোনো পর্যটকদের আনাগোনা, নেই ফ্ল্যাশলাইটের ঝলকানি মন হু হু করা বিশাল এক শূন্যতা নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে শহরটা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টুয়ার্টসন অনেক দিন আগেই লোকডাউন ঘোষনা করেছেন। সরকার শুধুমাত্র জরুরি অবস্থা ছাড়া সকলকেই ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। লোকডাউন এর ফলে স্কটল্যান্ডের একে একে স্কুল, কলেজ, অফিস, ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ পাব, রেস্ট্রুরেন্ট, ক্লাব গুলো কার্যত একেবারেই জনশূন্য, বলাবাহুল্য কয়েক হাজার কর্মী এখন নিজ গৃহে বন্ধি। নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যের জন্য এসদা, সাইনবেরি, টেস্কোর মতো শপিং মল খোলা থাকলেও তাও আবার কিছু সময়ের জন্যে, শপিং মলের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের আগের চেনা সেই লম্বা লাইনটা আর চোখে পড়ে না।
এডিনবার্গ এর প্রবাসী বাঙালিরাও এখন গৃহবন্দি। সবার কাছে একটাই প্রশ্ন কবে ঠিক হবে সবকিছু? কিন্তু কবে তা হবে, তা কেউই বলতে পারবে না, কার্যত ভাগ্যদেবতাই এখন ভরসা সবার কাছে। এই তো সেদিন নববর্ষ শুরু হলো; আবেগ হয়তো রইলো মনে তবু তার আনন্দের ছিটে ফোটাও পৌছালো না কারো হৃদয়ে, কারণ হৃদয়টা যে সত্যি ব্যাকুল। আসলে এবছর টাই তো ফুল না ফোটার বসন্ত, মনমরা দিনগুলো কেমন যেন কেটে যায় আনমনে কেউ টেরই পায় না, তবুওতো তারা বাঙালি তাই; হাজারো দুঃখ ভরা আনমনা মনেও মাঝে মধ্যেই তাদের ফেইসবুক লাইভ এএসে সন্ধ্যায় গানের আসর বসে। প্রবাসে থেকেও দেশিয় শিল্পীদের গান শোনা এবং একটু সময় কাটানো। এখানকার বাঙালিরাও কেউ কেউ তাতে অংশ নেয়, “সাবাশ” এবং “এ এস আই এফ” প্রবাসী বাঙালি আর প্রবাসী ভারতীয় দের এই দুই সংঘের পক্ষ থেকে যৌথ প্রযোজনায় সেই রকমই আগামী শনিবার 2রা মে বিকাল 4টা থেকে রাত্রি 8.30 পর্যন্ত এক সংগীতঅনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঐ দিন কলকাতা থেকে ফেইসবুক লাইভ এ যোগদান করবেন প্রখ্যাত উচাঙ্গ সংগীত ও হারমোনিয়াম শিল্পী শুভেন্দু ব্যানার্জী। “সাবাশ” ও “এস এ আই এফ” এর দুই প্রেসিডেন্ট রঞ্জিত সিংহ এবং অভিজিৎ চক্রবর্তী দুজনই এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা, ওনাদের মতে একঘেয়েমি নিরানন্দের মাঝে সকলকে একটু আনন্দ দেওয়ার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। লোকডাউন এর ফলে সকলেই গৃহবন্দি। এতো কিছু না পাওয়ার মধ্যে একটুকরো আনন্দ, সবাই যদি একটু খুশি হয় সেটাই বা কম কিসের; সবার শুধু একটাই প্রার্থনা তাড়াতাড়ি যেন সব ঠিক হয়ে যাক।