বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর, ভাটপাড়া :: ভাটপাডা নৈহাটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক কেলেঙ্কারি মামলায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন সাংসদ অর্জুন সিং এর প্রিয় পাত্র ও আত্মীয় পাপ্পু সিং ওরফে সনজিৎ সিং। পুলিশের দাবি সনজিৎ সিং ব্যাংক কেলেঙ্কারি কি-ম্যান যার একাউন্টে ব্যাংক কেলেঙ্কারি প্রায় 12 কোটি টাকা ঢুকেছে।
পাপ্পু সিং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন তার গ্রেফতারের পর এবার এই কেলেঙ্কারির মূল নায়ক সাংসদ অর্জুন সিংহের গ্রেফতারির পালা বলে দাবি করছেন এলাকার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম। তার দাবি সনজিৎ সিং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন । সনজিৎ সিং ওরফে পাপ্পু সিং ব্যারাকপুর সাংসদ অর্জুন সিং এর আর্থিক সমস্ত বেআইনি লেনদেনের কি-ম্যান বলে পরিচিত।
গত শুক্রবার রাতে যখন অর্জুন সিং মনিষ শুক্লা হত্যার প্রতিবাদে ব্যারাকপুর টিটাগর মোমবাতি মিছিলে ব্যস্ত ছিলেন তখন ব্যাপক পুলিশ বাহিনী নিয়ে তার বাড়ি ঘিরে ফেলে ডিডি -র গোয়েন্দারা । পুলিশের দাবি পাপ্পু সিং কে তার বাড়ির পাস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সূত্রের দাবি যে পাপ্পু সিং কে তার গোপন ডেরা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য এর আগে কয়েকবার পাপ্পু সিং কে গ্রেফতার করতে চেষ্টা করে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এর পুলিশ কিন্তু অর্জুন সিং এর ব্যক্তিগত সুরক্ষা সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানরা পুলিশকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয় ।সনজিৎ সিং ওরফে পাপ্পু সিং এর বাড়ি অর্জুন সিং এর বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া। পুলিশ পাপ্পু সিং এর বাড়ি গেলে আটকে দিতেন কেন্দ্রীয় জওয়ানরা, এক জন সাংসদের বাড়িতে পুলিশি সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া ঢোকার অনুমতি দিতেন না। অর্জুন সিং এর সুরক্ষা কর্মীদের জোরেই পাপ্পু সিং বারেবারে বেঁচে গেছেন। যদিও অনেকবার অর্জুন সিং এর বাড়ি গিয়ে পুলিশকে অপমানিত হয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
সমবায় ব্যাংক কেলেঙ্কারি কেলেঙ্কারির জন্য নোটিশ দিলেও পাপ্পু হাজিরা দেননি ও পুলিশ বা আদালতের কোন নোটিশ গ্রহণ করতেন না। অবশেষে পুলিশ তার বাড়ির দরজা নোটিশ সেটে দিয়ে আসে। লাগাতার পুলিশের বাড়তে থাকা চাপের জন্য অবশেষে পাপ্পু সিং একদিন রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে যান এলাকা ছেড়ে। জানা যায় কয়েক মাস ধরে তিনি অন্য রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন কিন্তু গতকাল তিনি ব্যারাকপুরে লেনদেনের জন্য ফিরে ছিলেন। তখনই গোপন খবর জানতে পারেন গোয়েন্দারা। খবর পাওয়া মাত্র সেই গোপন ডেরা কে ঘিরে ফেলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
12 কোটি টাকার এই সমবায় ব্যাংক কেলেঙ্কারি মূল নায়েকের রহস্য ফাঁস করতে সঞ্জীবকে জেরার জন্য গোয়েন্দারা 5 দিনের রিমান্ড চেয়েছে আদালতের কাছে।
উল্লেখ্য গত 19 এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক পাঁচ-সাত মাস আগে ভাটপাড়ার বিধায়ক ও পৌরসভার চেয়ারম্যান অর্জুন সিং 22 জন নিজের প্রিয় পাত্র ও কনট্রাক্টরদের নামে 54 লক্ষ টাকার বেআইনিভাবে ব্যাংক লোন পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
আরো অভিযোগ তিনি চেয়ারম্যানের পদে থাকার সুবাদে ভুও টেন্ডার নোটিসে ও ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করেদেন তার প্রিয় পাত্র ও কনট্রাক্টরদের নামে । তাছাড়া এই ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারকে কেন্দ্র করেই তার প্রিয় দের 54 লক্ষ টাকা করে সমবায় ব্যাংক থেকে লোন স্যাংশন করে দেন নিজেই। কারণ তখন অর্জুন সিং নিজেই ভাটপাড়া নৈহাটি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।
পরে এই 12 কোটি টাকা ভাটপাড়া কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে তার প্রিয় পাত্র ও আর্থিক লেনদেনের কি-ম্যান বলে পরিচিত পাপ্পু সিং এর একাউন্টে ঢুকে যায় বলে দাবি পুলিশের।
ভাটপাড়ার নৈহাটি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের 12 কোটি টাকার জালিয়াতির খবর প্রথম “অবতর খবর” এর পর্দা আমরাই করেছিলাম ।তারপরে জনসমক্ষে এই খবর আসামাত্র তদন্ত শুরু হয়। প্রথমে তদন্তের ভার যায় ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের হাতে যায় । পরে এই দায়িত্ব গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। গোয়েন্দারা এই মামলায় ব্যাংকের সিইও চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে। তাছাড়া গ্রেফতার করা হয় ভুয়ো লোন গ্রহণকারী আরে তিন জনকে।
গোয়েন্দাদের দাবি এই সিইও সহ ভুয়ো লোন গ্রহণকারী সুরেশ রানা , কৃষ্ণা সাও, ও অভিজিৎ মুখার্জি কে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পাপ্পু সিং এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় ।পাপ্পু সিং এর ব্যাংক একাউন্ট তলব করে ব্যাংকে ডিটেইলস বার করে নেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের দাবি সমস্ত লোনের টাকা পাপ্পু সিং এর একাউন্টে জমা পড়ে কিন্তু এই পাপ্পু সিং এর অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকাগুলো কোথায় কোথায় গেছে তার তদন্ত প্রয়োজন আর এর উত্তর পাপ্পু সিং দিতে পারে, তাই এখন পাপ্পু সিং কে জেরা করে আসল নায়েক কে গ্রেফতার করবেন তারা।