Editor’s কলমে …. “করোনার abcd…” Part-2″ লিখছেন : বিনয় ভরদ্বাজ
অবতক খবর, ৩০শে মার্চ :: আজ করোনা ভাইরাসের abcd… দ্বিতীয় অংশ। যেটা আমি বলেছিলাম যে করোনা ভাইরাসের ভারতবর্ষের সম্পর্ক নিয়ে জানাবো তবে তার আগে জানিয়ে রাখি যে বিশ্বের প্রায় 200 দেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। আজ 30 শে মার্চ আজ খবর লেখা পর্যন্ত বিশ্বে 739,057 জন সংক্রমিত, মৃত 35,015 ভারত এই সংক্রমণের শিকার 1200 বেশি মানুষ। গত রবিবার পর্যন্ত ভারতে এই সংক্রমণের কবলে পড়েছিলেন 1074 জন মানুষ। মারা গেছিলেন 26 জন মানুষ কিন্তু আজ নতুন করে আবার সংক্রমিত হয়েছেন প্রচুর মানুষ। আজ ভারতে করোনায মৃতকের সংখ্যা 29 ।
দিন দিন ভারতের সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এবার ভারতে করোনা ভাইরাসের আগমনের কাহিনী শুনুন :-
ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রথম আগমন
30 শে জানুয়ারি দিনটি ভারতবর্ষে করোনা ইতিহাসের জন্য বিশেষ দিন। এই দিনে প্রথম ভারতবর্ষে কেরালায় এক 20 বছর বয়সী যুবতীর শরীরে করোনা ভাইরাস-এর তথ্য ধরা পড়ে ।এই যুবতী চীনের উহান শহরের পাঠরত ছিলেন । তিনি মেডিসিনের ছাত্রী। উহান সেই শহর যেখানে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে ছিল। সেই শহর থেকে এই ছাত্রীর শরীরে করোনা সংক্রমণ নিয়ে কেরালায় প্রথম প্রবেশ করলেন। তার সঙ্গে আর দুই ছাত্রী উহান থেকে ফিরেছিলেন।এটাই ছিল ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রথম আগমন ।
ভারতে এসেই তার সর্দি জ্বর গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। হাসপাতালে ভর্তি করতেই ধরা পড়ে তার শরীরে করোনার সংক্রমণ। তার সংক্রমণের কথা জানা মাত্রই 3রা ফেব্রুয়ারি সঙ্গে সঙ্গেই তার সঙ্গে আসা তিনজনকে করেনটাইনে নিয়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় তাদের মুখের লালার পরীক্ষা। আর এভাবেই প্রথম ভারতে করোনার অনুপ্রবেশ ঘটল। তার আগে উহান থেকে ফিরে আসা আর দুই জন করোনা আকান্ত্রের 2 মার্চ ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয়।
এভাবে শুরু হয়ে যায় চীনের উহান শহর থেকে ভারতে আগমন অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের আগমন। শুধুমাত্র চীনের উহান শহর নয় সেখান থেকে যারা যারা বিশ্বের অন্যান্য দেশে উড়ে গিয়েছিলেন সেখানে সংক্রমিত করেছেন তারা। আর সেখানে সংক্রমিত হওয়ার পর সেই বিভিন্ন দেশ থেকে দেশী-বিদেশীরা ফিরতে শুরু করে দিলেন ভারতে। আর তখন শুরু হয়ে যায় করোনার আতঙ্ক ভারতেও।
ভারতে করোনার 4 নং রুগী দিল্লির বাসিন্দা। তিনি ইতালি থেকে করোনা নিয়ে দিল্লি ফিরেছেন।তার লিঙ্ক কোলকাতা ও কালিম্পং- এর সঙ্গে পাওয়া গেছে।পঞ্চম রুগী তেলেঙ্গানার হায়দারাবাদের। তিনি দুবাই সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়ে এই রোগে আক্রান্ত হন। পরের করোনা আকান্তরা ইতালির।ভারতে রাজস্থান জয়পুরে 15 জন বেড়াতে এসেছেন। তাদেরও করোনা ধরা পড়ে। আর এভাবেই বিদেশি নাগরিক বা যারা বিদেশে কোনো কারণে ছিলেন বা গেছিলেন তারাই মূলত এই করোনা ভাইরাস ভারতে আমদানি করেছেন।প্রথম ভারতে ১৮ জন করোনার আক্রান্তরা সুষ্ঠ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন । খবর লেখা পর্যন্ত ভারতে 1200 জন করোনায় আক্রান্ত ও 29 জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে প্রথম করোনার রোগীর মৃত্যু
ভারতবর্ষে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের মৃত্যু কেরালায় ঘটে। মৃতের বয়স 69 বছর। এর্নাকুলাম মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু ঘটে । মৃত্যুর আগে তিনি জানিয়েছিলেন যে 22 শে মার্চ তিনি এরনাকুলাম চুল্লিকাল থেকে এসে শরীরের জ্বর ও স্বাসজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি গত 16 মার্চ দুবাই থেকে ফিরে এসেছিলেন দেশে। তার ব্লাড প্রেসার ও হৃদয় রোগ আগে থেকেই ছিল। তার কফ পরীক্ষা করে জানা যায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এর্নাকুলাম মেডিকেল কলেজে শুরু হয় তার চিকিৎসা কিন্তু 12 ই মার্চ এই মেডিক্যাল কলেজে মারা যান সেই ব্যক্তি। এই ছিল ভারতে করোনার প্রথম মৃত্যু।
দুবাই থেকে 16 ই মার্চ এই দেশে ফিরে আসা থেকে শুরু করে 22 শে মার্চ হাসপাতলে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত তিনি এর মাঝে 80 জনকে সংক্রমিত করেন বলে জানা গেছে। তার সম্পর্কে আসার মধ্যে তার স্ত্রী ও তার ড্রাইভার অবশ্যই সামিল ছিলেন। তাদের সকলকে মেডিকেল কলেজের করেন্টাইনে রাখা হয় ও তাদের চিকিৎসা শুরু হয়।
13 ই মার্চ আরও এক করোনা আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু হয় তার বয়স হয়েছিল 68 বছর দিল্লিতে তার মৃত্যু হয় 8 ই মার্চ তার টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে তারপর থেকে তিনি চিকিৎসায় ছিলেন কিন্তু 13 তারিখ তিনি মারা যান তিনি হাই ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। করোনা আক্রান্ত এক রোগীর সম্পর্কে এসে তিনি আক্রান্ত হন। দিল্লির আর এম এল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় এটা ছিল দেশের দ্বিতীয় করোনা আক্রান্তের মৃত্যু।
ভারতে এভাবে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে যায় তৃতীয় মৃত্যু ঘটে 17ই মার্চ। একদিনের গ্যাপ দিয়ে 19 ও 20 কুড়ি তারিখে 1-1 টি করে মৃত্যু হয়। 22 শে মার্চ প্রথম একসঙ্গে দুজনের মৃত্যু হয়। 22 শে মার্চ অব্দি মোট সংখ্যা 5 থেকে বেড়ে 7 হয়ে যায়। 23 শে মার্চ একসঙ্গে তিন জনের মৃত্যু হয়। 25শে 2জনের ও 26 শে মার্চ রেকর্ড মৃত্যু ঘটে ভারতে। একসঙ্গে একই দিনে 8 জনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ মোট ভারতে মৃতদের সংখ্যা 20 পৌঁছে যায়।
28 শে মার্চ আরও দু’জন এবং 29 মার্চ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়ে ভারতে মৃতদের সংখ্যা 27 এ পৌঁছে যায়। আজ 30শে মার্চ আজ খবর লেখা পর্যন্ত 2 জনের মৃত্যুতে এবার মোট নিহতের সংখ্যা 29 হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খবর লেখা পর্যন্ত এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ভারতে 1200 ইতিমধ্যে 29 জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আজ শতাধিক রোগী নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন। সারা বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা সাত লক্ষ পার করে গেছে।
22 শে মার্চ থেকে সারাদেশব্যাপী প্রায় লকডাউন চলছে। মানুষকে স্বেচ্ছায় ঘরে বন্দী হতে বলা হয়েছে। জরুরী পরিসেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী বারেবারে দেশবাসীকে বলেছেন লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে। মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে দূরত্ব বজায় রেখে করোনার মোকাবিলা করতে অনুরোধ রাখছেন । কারণ এটাই হচ্ছে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা একমাত্র পথ। প্রতি মুহূর্তে দেশবাসী দের গ্রাস করে চলেছে। সব সময় আতঙ্কে রয়েছি আমরা সকলে। করোনা কে হারাতে এখন একজোট হয়ে লড়াই চালাচ্ছে দেশ। জয় যুক্ত হতেই হবে।
আজ এই পর্যন্ত ।তবে আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গের করোনা সম্পর্ক নিয়ে খুঁটিনাটি তুলে ধরবো। প্রথম বাংলায় করোনার আগমন কার হাথ ধরে ঘটল ? কোন কোন জেলার কত মানুষ আক্রান্ত কত করেন্টাইনে? শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা কত কোথায়? সমস্ত তথ্য জানতে আগামীকাল চোখ রাখুন অবতক খবরে করোনার abcd …..Part – 3