অবতক খবর,৫ মার্চ: শহীদ মিনারের সভায় ভারতবর্ষের সর্বভারতীয় নেতা ‘মোটাভাই’ অমিত শাহ যে রহস্যময় বক্তৃতা করে গিয়েছেন তাতে রাজ্য নেতারা টেনশনে পড়ে গিয়েছেন। রহস্য, কৌতূহল, উত্তেজনা, আগ্ৰহ — এই সব কটি উপাদানে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে বিজেপির রাজ্য নেতারা।

শাহজি হঠাৎ করে বলেছেন, কোনো রাজকুমার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। ‌ এলাকার কোনো ভূমিপুত্রই রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সঙ্গে আরও জুড়ে দেন মাটি থেকে উঠে আসা নেতাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসবেন। খুব সহজ সরল স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তিনি রাজ্য বিজেপি নেতা ও শ্রোতৃবৃন্দকে এ বক্তব্য জানিয়ে যান।

এরপরই টানটান উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। কে এই ভূমিপুত্র? এই ভূমিপুত্র শব্দটি সবচেয়ে রহস্যময়। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ভূমিপুত্র।মেদিনীপুরের মাটি থেকে উঠে আসা নেতা। বিজেপির যে বুনিয়াদ, যে ভিত্তি সেই আরএসএস-এর শিক্ষাপ্রাপ্ত কর্মী তিনি। ফলে তার গায়ে লেগে রয়েছে ভূমির গন্ধ, মাটির গন্ধ, জঙ্গলমহলের গন্ধ। তাহলে কি দিলীপ ঘোষকেই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য করছেন তিনি?

অনেকে মনে করছেন যে, রাজকুমার কথাটি তিনি যখন ব্যবহার করেছেন তাহলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি পুরুষ কর্মীকেই বোঝাতে চাইছেন। তাহলে এবার প্রশ্ন উঠেছে বাবুল সুপ্রিয়ও তো ভূমি থেকে উঠে আসা কর্মী। রাজনীতির ময়দানে বিশেষ করে সংসদীয় রাজনীতিতে তিনি তার পরিচয় রাখছেন, তিনি সাংসদ। সংগীত জগতেও তার একটি সুনাম রয়েছে।‌ তাহলে কি তাঁর কথাই ভাবা হচ্ছে? অন্যদিকে তার উপরে রয়েছে রাম ষবাবার প্রভাব। সুতরাং তিনিও এগিয়ে যেতে পারেন।

অন্য এক দল মনে করছেন স্বপন দাশগুপ্তকেই অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। কারণ,তিনিও বাংলার ভূমিপুত্র। যদিও তিনি বর্তমানে দিল্লি থাকেন। তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। হলে তার কথা উঠতে পারে।

অন্যদিকে বীজপুর অঞ্চলের মানুষেরা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ভারতবর্ষের প্রথম শ্রেণীর নেতা কাঁচরাপাড়ার ভূমিপুত্র থুড়ি বাংলার ভূমিপুত্র মুকুল রায়। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি এতদিন চাণক্য হিসেবে পরিচিত। কূটনীতির রাজা কৌটিল্য তিনি। এই জনসভায় অমিত শাহ স্বীকার করেছেন,বাংলায় বিজেপির উত্থানে অন্যতম ফ্যাক্টর মুকুল রায়। তিনি এটা মেনে নিয়েছেন। ফলে বীজপুরবাসীর মনে এই দানা বেঁধেছে যে, মুকুল রায়ও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন।

অন্যদিকে এর ফলে বীজপুরে একটি প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূলের মধ্যে তো বটেই, যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন তাদের মধ্যেও বিশেষ আলোড়ন দেখা গেছে। তারা বর্তমানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছেন। তারা এমন বলছেন, ‘আরে মুকুল দা যদি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যায় তাহলে?’ তাহলে আসলে তারা মুকুল দার দিকে ভিড়ে যাবেন। যারা বিজেপিতে গিয়েছেন তারা তো মুকুল দাকে সমর্থন করবেনই এবং যারা তৃণমূলের রয়েছেন তারাও মুকুল দার দিকে চলে আসবেন। অর্থাৎ তৃণমূল দলের রাজনৈতিক কর্মী বলে যারা এই অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত তাদের ভেতরে ভেতরেও বিজেপি বিজেপি ভাব রয়ে গেছে। যেমন চোরের মন বলে পুলিশ পুলিশ।

এদিকে সৌজন্য দেখিয়েছেন মুকুল রায়। তিনি আগেভাগেই বলে দিয়েছেন, তিনি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে থাকতে চান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চান না। বাংলার তৃণমূল দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঠিক এই ধরনেরই কথা বলেন। তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকতে চান, তিনি কোন পদ চান না। অথচ, মুখ্যমন্ত্রীর পদ তিনি সহজেই ছেড়ে দিতে চান, সেটা তো দূরের কথা, তিনি তো ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীও হতে চান। তেমনি স্বাভাবিকভাবেই তিনি অতি বিনয় প্রকাশ করে বলেন,ক্ষমতা টমতা আমার দরকার নেই, আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই। যাই হোক, ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামত বাড়ে। আগে বক মরুক তো!

তো আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপির অবস্থা কেমন সেটি বোঝা যাবে,তারপরে তো বিধানসভার কথা। সেতো অদূর ভবিষ্যতের কথা।

এদিকে বাংলার গর্ব মমতা,এই স্লোগানটির নিশ্চিত উদ্ভাবক সেই বিখ্যাত সেফোলজিস্ট পিকে।এই স্লোগানটি ইতিমধ্যেই আলোচনা ও বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাঙালির সেন্টিমেন্টে আঘাত পড়েছে। এই স্লোগান কতদূর বাঙালির হৃদয়ে প্রবেশ করবে সে তো ভবিষ্যতই বলবে।

যাই হোক, বিজেপি জিতলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভূমিপুত্র হবেন, সেই আশার বাণী অমিত শাহ শুনিয়ে গিয়েছেন।