অবতক খবর: রাত পোহালেই রাজ্যে ভোট, তার আগেও অশান্তির ছবি পল্লী বাংলা জুড়ে। এমনকী ভোটের আগের দিনও বদল হল না ছবিটা। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই বাংলায় ৩০ দিনে মোট ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দিকে দিকে অশান্তির ছবি সামনে আসে। মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে অশান্তি, হিংসার ঘটনা উঠে এসেছে। মনোনয়নপর্ব মিটে যাওয়ারও পরও সেই অশান্তি ছিল অব্য়াহত।
আর ভোট হিংসার শিকার হয়ে চলে গিয়েছে ১৮ জনের প্রাণ। ৯ই জুন, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয় কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখকে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে কংগ্রেস।১৫ই জুন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে ভাঙড়ে খুন হন আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা ও ২ তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা ও রাজু নস্কর।ওইদিনই মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মোজাম্মেল শেখকে পিটিয়ে ও গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
১৭ জুন, কোচবিহারের দিনহাটায়, বিজেপি প্রার্থীর দেওর শম্ভু দাসকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছুরি মেরে খুন করা হয়।ওইদিনই মালদার সুজাপুরে পিটিয়ে মারা হয় তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান মোস্তাফা শেখকে।
১৫ জুন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বাম-কংগ্রেসের মিছিলে গুলি চলে। গুলিবিদ্ধ হন ২১ বছরের সিপিএম কর্মী মনসুর আলম। ২১ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
পরের দিন ২২ জুন, পুরুলিয়ায় রেলশহর আদ্রায় পয়েন্ট ব্ল্য়াঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূলের টাউন সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে।২৪ জুন, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুষ্কৃতী আলিম বিশ্বাসের।২৭ জুন, কোচবিহারের দিনহাটার গীতালদহে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জারি ধরলা গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী বাবু হকের।১ জুলাই, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ গ্রামে গুলি করে খুন করা হয় যুব তৃণমূল কর্মী জিয়ারুল মোল্লাকে। পঞ্চায়েতের টিকিট নিয়ে তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের কোন্দলে খুন বলে অভিযোগ ওঠে।
৩ জুলাই, ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার শালিপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী পরিতোষ মণ্ডলের।৪ জুলাই, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার গাঙাটি গ্রামে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ১৭ বছরের তৃণমূল সমর্থক ইমরান হোসেনের। আইএসএফ ও সিপিএম সমর্থিত নির্দলদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে।৫ জুলাই, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুষ্কৃতী কামাল শেখের। ৬ জুলাই বীরভূমের মহম্মদবাজারে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ।ওইদিনেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে মৃত্য়ু হল আক্রান্ত কংগ্রেস নেতার। সোমবার প্রচার চলাকালীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে।৭ জুলাই মুর্শিদাবাদের রানিনগরে কংগ্রেস কর্মী অরবিন্দ মণ্ডলকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এদিকে শুক্রবার ভোটের চব্বিশ ঘন্টা আগে মুর্শিদাবাদে খুনের ঘটনা ঘিরে পরিস্থিতি তপ্ত। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মুর্শিদাবাদ জেলা সফরের মধ্যেই জেলায় কংগ্রেস প্রার্থীর দাদাকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই খুনের ঘটনার জেরে অভিযোগের তির তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রানিনগরের হেরামপুর অঞ্চলের রায়পুর গ্রামের ঘটনা। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মৃতের নাম অরবিন্দ মণ্ডল (৪৫)। তিনিও কংগ্রেস কর্মী। অভিযোগ উঠছে, গত শুক্রবার সকালে কংগ্রেস প্রার্থীর দাদার ওপর হামলা চালায় শাসকদলের লোকেরা। যার জেরেই এই মৃত্যু বলে দাবি পরিবারের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ।