অবতক খবর,৫ নভেম্বর: মাটি তো মৃত্তিকা। মাটি তো মা। মাটি নিয়ে যারা খেলে মা তাদের জাত-ধর্ম-বর্ণ মুছে দেয়। মৃত্তিকা তাদের গড়ে তোলে শিল্পী হিসেবে– ‌মৃৎশিল্পী।

‌জেলা-পূর্ব মেদিনীপুর, শহর-পাঁশকুড়া, গ্রাম-কেশবগড়। এখানে ম-এ মুসলিম নয়, ম-এ মানুষের পাড়া। এরা সব মৃৎশিল্পী। প্রতিমা গড়ার কারিগর।সেই বিশ্বকর্মা থেকে সব ঠাকুর সব মূর্তির প্রতিমা এরা গড়েন। আর এরা নাকি মুসলিম,।তারা গড়েন হিন্দুদের প্রতিমা!এরা আমাদের এই ধর্মীয় সংকীর্ণতার চোখে বিভেদ রেখা টেনে মুসলিম শিল্পী হলেও মাটি এদের জাত সম্প্রদায় সব ধুয়ে মুছে দিয়েছে। এই ধরার মাটিতে মাটি হাতেই তাদের জীবনযাপন– প্রতিমা গড়ো আর পেটের ভাত জোটাও। পেটের কোন ধর্ম নেই, কেননা সব মানুষের পেট আছে, ভাতের ও কোন ধর্ম নেই, কারণ সব মানুষের পেটের খিদেই এই ভাত মেটায়।

সংবাদ বলছে এখানে বসত করে একান্নটি শিল্পী পরিবার। এদের রক্তস্রোতে পটের ঐতিহ্য বর্তমান। এরা আসলে পটচিত্রকর। এদের মধ্যে আটটি পরিবার হিন্দু দেব-দেবীর প্রতিমা নির্মাণ করে সংসার জীবিকা নির্বাহ করে। দুর্গা প্রতিমা বিভিন্ন রাজ্যে পর্যন্ত পাড়ি দেয়। এদের হাতের কাজ এতই নিপুণ, এতই বিখ্যাত। এবার কালীপুজোয় এদের বায়না হয়েছে খুবই ভালো। ‌ এক একটি পরিবারের প্রতিমা কারিগরেরা বানাচ্ছেন একশরও বেশি কালী প্রতিমা। নজরুলের সঙ্গীতে প্রাণ পেয়েছিল শ্যামা।আর এদের হাতের মাটিতে মা মৃন্ময়ী রূপ ধারণ করছে। ‌ মেয়েদেরও হাত লেগেছে মায়ের গায়ে। ওলা বিবির থান আর প্রতিমা গড়ার ছাউনি পাশাপাশি। স্বামী তাপসের কাজে হাত লাগিয়েছে সুজাতা চিত্রকর। আর এক শিল্পী তপনের সঙ্গে হাত লাগিয়েছে চায়না চিত্রকর।

চায়না বলেন, শিল্পীর আবার জাত কি, লিঙ্গ কি? প্রতিমা গড়ায় পুরুষ আর নারী কি?।প্রতিমা তো আমাদের কাছে শিল্প, মাটি হয়ে ওঠে আমাদের হাতে প্রতিমা। হিন্দুরা তো তাকেই পুজো করে। মাটির মাধ্যমে আমাদের মিলন ঘটে যায়। ‌আর ওই যে বলে না মুসলমানের উৎসব, সত্যিই কি এটা মুসলমানদের উৎসব? এ তো মানুষের উৎসব। সেটা হচ্ছে চৈত্র মাসের ওরা বিবি উৎসব। মানুষের ভিড় সেখানে হিন্দু-মুসলিম কোথায়, আশ্চর্য!