এ কোন্ রোগ এলো? তার একমাত্র ওষুধ, তুমি থাকো তালাবন্দি, দেখিবে না মানুষের মুখ

মহামারী ও মানুষের মুখ
তমাল সাহা

মনসৃজা,
তিনদিনেই হাঁপিয়ে উঠেছি
এভাবে ঘরবন্দী হয়ে বাঁচা যায়?
তিনদিন দেখিনি তোমার মুখ
মনে হয় তিনশো বছর পেরিয়ে যায়।

উঠোনে পিতামহের হাতে পোঁতা
আমগাছটির সঙ্গে এখন কথা বলি
নিবিড় সে সব কথা! সঙ্গে নীরবতা।
সব ছেড়ে এখন এক মিটার দূরত্বে বসি।
রোজ যে ইছামতী নদীটির তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতাম
তার রং আমি ভুলে যাই
আমি কত কী যে ভুলে যাই!

সাঁওতাল পাড়ায় যাইনা আর হাঁড়িয়া খেতে
সতীমার মেলায় এবার গাঁজার কল্কেতে
হাত রাখিনি বাউলদের সঙ্গে বসে।
ধোঁয়াগুলি শূন্যে পাক খেতে খেতে
গন্ধ ছড়িয়ে উড়ে যায়,সেই দৃশ্য ভাবি।
পোয়াতি নারীটি দাঁড়িয়ে ডালিমগাছ তলায়।
অনাগত শিশুটির মঙ্গল কামনায় মাটির ঘোড়া বেঁধে যায় লাল সূতায়।
সে তো মহামারী মৃত্যুকে মুঠোয় চেপে প্রসবের দিকে যায়…

মনসুর আলি তিনদিন ধরে
আসে না আর আমার বাড়ি—
দুঃশাসনের ঊরুভঙ্গের কাহিনী আর
ওকে শোনানো হল না,
একুশ দিন পরেও কি হবে!

ভাগওয়ালা রামাবতার এখন ঘরে
চটকলের চিমনি তার চোখে ঘোরে
পাটের ফেঁসো যায় উড়ে বহুদূরে।
লক ডাউনের আগের দিন রাতে
ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল
বলেছিল, দাদা! লক আউট
তো হরবখত শুনেছি
লক ডাউন কী বাত কভি শুনা নেহি।

প্রিয়া বাঁশফোড়
আমার ঘরের কাজের মেয়ে,
ওকে ছুটি দিয়েছি।
ওর অপূর্ব কন্ঠস্বর
কাকু! পা উঠিয়ে বসো খাটে,
মেঝেটা মুছতে হবে—
জলে ভেজা একদলা ন্যাকড়া ওর হাতে।

বার বারান্দায় এখন আর ভিড় নেই
সেন্টু, রাণারা আসেনা, আসেনা রণজয়।
কবিতা কোন দিকে যাবে!
আমি বলি, নদী কোন্ দিকে যায়?
কেন, সমুদ্রের দিকে!
আমি বলি,তাহলে? কবিতা যাবে মানুষের দিকে।
এসব কথা হয় না আর মুখোমুখি বসে।

মণি বলেছিল,
তোকে আরও লিখতে হবে অঞ্চলের কথা,
এসব কথা মনে পড়ে
আমি কি শুনি অন্য কোনো বার্তা!

এইসব দৃশ্যাবলি কি সব চিত্রকল্প হয়ে যাবে,
করোনার আবির্ভাবে?

শুধু মুখ, মুখ আর মুখ
কতসব মানুষের মুখ
অরণ্য নদী আকাশ নক্ষত্রর মুখ
দেখিয়াছি আমি ভালোবাসার যাবতীয় মুখ।
মুখোশে ঢেকে মুখ বসে আছি এক কোণে—
এ কোন্ আশ্চর্য বিপন্নতার বিচ্ছিন্নতার অসুখ এখন আমার পৃথিবীর বাগানে!