অবতক খবর,২৩ সেপ্টেম্বর: একটানা বর্ষার ভ্রুকুটি থেকে কবে মিলবে মুক্তি তা প্রকৃতির হাতে। কিন্তু এই বৃষ্টির জমা জলের ভোগান্তি যে মানুষেরই তৈরি তা মানছেন পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে কেলেঘাইয়ের জলে প্লাবিত হয়েছে পটাশপুর, ভগবানপুর ও এগরার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিনই জলের তলায় চলে যাচ্ছে নতুন নতুন জায়গা। কিন্তু এসবের পেছনে যে একটা শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রয়েছে তা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে সর্বত্র।

চারদিকে নদী ও সমুদ্রের বেড়াজালে ঘেরা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। ৬৫.৫ কিমি সমূদ্র তীরবর্তী এলাকা সহ রূপনারায়ন, হলদি, কেলেঘাই, বাগুই, রসুলপুর প্রভৃতি হল এই জেলার প্রধান নদী। এই সমূদ্র আর নদীর সুবিধে কাজে লাগিয়ে জেলা জুড়েই যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে অপরিকল্পিত মাছের ভেড়ী। যার মাসুল গুনতে হচ্ছে জেলাবাসীদেরই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জল এতদিন গড়িয়ে যেত চাষের জমিতে। সেই জল নালা হয়ে চলে যেত নদীতে। আর এখন বৃষ্টির জল যাওয়ার রাস্তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে অপরিকল্পিত ভেড়ি ও ভাটা’র দাপটে
জেলা প্রশাসন সব জেনেও নীরব। মাছ চাষে উৎসাহ দেওয়ার নামে জেলার ভৌগোলিক চিত্রটাই বদলে গিয়েছে চুপিসাড়ে। জেলার ২৫টি ব্লকেরই নাম জড়িয়েছে এই তালিকায়। সেই সঙ্গে গজিয়ে উঠেছে বিপুল পরিমানে অবৈধ ভাটা। নদীর চরগুলিকে গায়ের জোরে বা কম দামে লিজ নিয়ে তৈরি ভাটাগুলির দাপটে নদীর স্বাভাবিক গতিও নষ্ট হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কোনও অংশই এই নিয়ে উচ্চবাচ্চ করতে রাজি নয়।

এরই মাশুল গুনছেন এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুরের বাসিন্দারা। কেলেঘাই নদীর পাড়ের বিস্তীর্ণ চরগুলিতে কিছুটা অন্তর মাছের ভেড়ী আর ভাটা গজিয়ে ওঠায় যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়েছে লক্ষাধিক পরিবার। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এরসঙ্গে সর্বত্রই বৃষ্টির জমা জলে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। পানীয় জল, শুকনো খাওয়ারের হাহাকার সর্বত্র। তুলনায় প্রশাসনের আয়োজন যৎসামান্য।
প্রতিটি এলাকাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। আগে থেকে প্রশাসন সচেতন কেন হল না সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে সর্বত্র। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনের দাবী, প্রশাসন মাঠে নেমে কাজ করছে। ত্রাণ পাঠানো হয়েছে প্রতিটি এলাকায়। তবে জল ঢুকে পড়ায় সব জায়গায় পৌছাতে সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও কাজ করছে। বর্ষার প্রকোপ কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই দাবী তাঁর।