অবতক খবর,২৯ জুনঃ নদিয়া চাকদহ ব্লকের যশড়া, নেউলিয়া, পালপাড়ার মহেশ পন্ডিতের শ্রীপাটের মতই চাঁদুড়িয়া এক নম্বর জিপির মালোপাড়ায় অবস্থিত বসুধা জাহ্নবী শ্রী পাট বৈষ্ণব দের কাছে পরম তীর্থ ক্ষেত্র বলে পরিচিত।আজও পূজিত হন প্রভু নিত্যানন্দের হাতে প্রতিষ্টিত শালগ্রাম শীলা জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাদেবুর।
প্রতিদিন নিত্যপূজা সহ জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা সহ রথযাত্রার সময়েও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবুও এখানে রথের দড়িতে আজ পযর্ন্ত টান পড়েনি, দুঃখের বিষয় এখানকার প্রাচীন বাসিন্দারাও জগন্নাথ দেবকে রথে উঠতেই দেখেননি। ফলে মাসির বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি জগন্নাথ দেবের এ পর্যন্ত ।এমনিতেই করোনা অতিমহামারিতে উৎসব মেলা বন্ধ। আক্ষেপ একটা রয়েই গেছে এলাকার বাসিন্দাদের।
কথিত আছে চৈতন্য মহাপ্রভু দীক্ষা নেবার জন্য যাত্রাপথে নবদ্বীপ ধাম থেকে হাঁটা পথে এই সুখসাগর রাস্তার মালো পাড়ার এক অশত্থ গাছের নিচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন।তার পর ঐ রাস্তা ধরে কুমারহট্টে ( বতর্মান নাম হালিশহর) মাধবেন্দ্র পুরীর পরম শিষ্য ইশ্বরপুরীর কাছে গিয়েছিলেন দীক্ষা নেবার জন্য। তিনি কুমারহট্ট এর আচার্যপাড়ায় বসবাস করতেন সেই স্থানটি এখন চৈতন্যডোবা নামে পরিচিত। পরে নিত্যানন্দ প্রভু চৈতন্যদেব কে অনুসরন করতে করতে এই স্থানে আসেন।যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু বিশ্রাম নিয়েছিলেন।ঠিক সেই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে ছিলেন নিত্যানন্দ।তারপর তিনি নিজের হাতে প্রতিষ্ঠা করেন শালগ্রাম শীলা সহ জগন্নাথ দেবকে।
তারপর এখানে এসেছিলেন নিত্যানন্দ প্রভুর দুই সহধর্মিনী বসুদা দেবী এবং তার বোন জাহ্নবা দেবী । সেই থেকেই বৈষ্ণব দের পরম তীর্থস্থান বসুধা জাহ্নবী শ্রীপাট নামে পরিচিতি পায়।একসময় গোলপাতার ছাউনি দিয়ে মন্দির ছিল।পাঁচ জন সেবাইত ছিল।তারা এখানে থেকে পূজা অর্চনা করতেন।তারও অনেক পরে সুখসাগর গ্রামে আক্রা সাধু এখানে থেকেই সাধন ভজন করতেন।আক্রা সাধুই পরবর্তীকালে চট্টোপাধ্যায় ঘরনি গৌরিদেবীর হাতে তুলে দেন এই শ্রীপাট এর দায়িত্ব ১৩৩৯ সালে।
তারপরেই দেবতার নিমিত্তে পাকা মন্দির তৈরী হয়।এলাকার মানুষের আক্ষেপ যদি প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া যায় বসুধা জাহ্নবী শ্রীপাটকে কিংবা ইসকন কর্তৃপক্ষের হাতে তাহলে এলাকার উন্নতি, পরিচিতি বাড়বে মনে করছে এলাকার বাসিন্দারা। গৌড়ীয় বৈষ্ণব তীর্থ পর্যটনে গ্রন্থ থেকে জানা যায় এই শ্রী পাটের প্রাণপুরুষ ছিলেন পুরুষোত্তম দাস ঠাকুর এবং তার পুত্র কানু ঠাকুর।
তিনি ছিলেন প্রভু নিত্যানন্দ পার্ষদ আবার দ্বাদশ গোপালের অন্যতম। পিতা-পুত্র উভয়েই বৈষ্ণবদের কাছে পরম পূজনীয় ছিলেন ।বসুধা জাহ্নবা শ্রীপাট প্রথমে সুখ সাগরে অবস্থিত ছিল, গঙ্গার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখনীয়, এই গ্রামের পাশাপাশি শিকারপুর গ্রামে চৌধুরীদের রথ যাত্রার বয়সও প্রায় দেড়শো বছরের পুরানো।
কালিগঞ্জ বাজারে প্রাচীন রথ মেলা,রাউতাড়ি বাজারে রথ এবং চাঁদুড়িয়া এক নম্বর জিপির অধীন নিত্যানন্দ মঠেও ধুমধাম সহকারে রথ যাত্রা পালন করা হচ্ছে।গত দুবছর কোভিডের কারনে বন্ধ থাকার পর এবারে রথ যাত্রা পালন হচ্ছে।বসেছে মেলাও।কিন্তু মালোপাড়া জগন্নাথ দেবের মুখ ভার,এবারও রথে করে মাসির বাড়িতে যাওয়া হলো না।এলাকার বাসিন্দাদের মত যদি স্থানীয় প্রশাসন মেলাটা কে সম্পাসারন করে নিত্যানন্দ মঠ এবং জগন্নাথতলার জগন্নাথদেবের মিলন স্থল করে মাসির বাড়ির ব্যবস্থা করে দিত তাহলে চাঁদুড়িয়ার ঐতিহ্য আবার ফিরে আসত এবং নিত্যানন্দ প্রভুর হাতে প্রতিষ্ঠিত বসুধা জাহৃবী শ্রীপাট প্রচারের আলয় আসত এবং বাংলার নানা প্রান্ত থেকে বহু ভক্ত ও পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটতো চাঁদুড়িয়া অঞ্চলে।