কোজাগরী সন্ধ্যায় আমি হাঁটিতেছি এই জনপদের রাস্তায়…

রাস্তায়
তমাল সাহা

অমাবস্যা পূর্ণিমা আমি গিলে খেয়েছি। ঘরবাড়ি সেই কবে ছেড়ে দিয়েছি। নারীদের প্রতি আমার যে দৃষ্টি ছিল তার ঘুরিয়ে দিয়েছি পশ্চিম দিকে।

আমি এখন রাস্তায় হাঁটি। সকলেই হাঁটে রৌদ্রের ভিতরে, আমি হাঁটি অন্ধকারের গভীরে।

কাল রাতে সকলেই, এইসব মানুষদের মধ্যবিত্তজন বলে মনে হয়, লক্ষ্মীপুজোর সওদা করবে বলে সারারাত ধরে বাজার করে।
কলার ডোঙা থেকে বানানো নৌকো কেনে তখন লকখিন্দরের মান্দাসের কথা আমার মনে পড়ে। এই মুহূর্তে নারীদের মুখ ভুলে যেতে চাইলেও বেহুলার চিরন্তনী মুখখানি ভেসে ওঠে। সঙ্গে দেখতে পাই সাদা লাল পেড়ে শাড়ি কপালে থেকে সিঁথি পর্যন্ত এক থাবড়া সিঁদুর মুখ নিয়ে বসে আছে বেহুলা মৃত লখিন্দরের পাশে।

আজ আকাশে কোজাগরি পূর্ণিমার চাঁদ তার মুখখানি বিধ্বস্ত জখম বলে মনে হয়। কিছুদিন আগে তার শরীরে দাপাদাপি করেছে ভারতের ইসরোর চন্দ্রযান।

আমি রাস্তায় হাঁটতে থাকি। দেখি এখনো লক্ষ্মী মূর্তি নিয়ে বসে আছে পটুয়ারা। কয়েকজন পটুয়ার পাশে তাদের মেয়েদেরও বসে থাকতে দেখি। লক্ষ্মীমাকে দর কষাকষি চলছে।
আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল এদিন চোরদের সমর্থনে পার্টি সমর্থকদের মিছিল হবে। লক্ষীর হাতে এবার ধানের ছড়া নেই। গরিবের চাল, গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষের পেটের চাল মেরে দিয়ে নেতারা প্রচুর কামাই করে নিয়েছে। নেতারা ঢুকে যাচ্ছে জেলখানার গরাদের ভেতর।

আমি আজ রাণী রাসমণি মোড় থেকে গান্ধী মোড় পর্যন্ত একটি মিছিলে দুনিয়ার ‘মজদুর এক হও’ এর বদলে ‘দুনিয়ার চোর এক হও’ স্লোগান শুনি। আরেকটি মিছিল চলে আসে থানা মোড় থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে।

এদিকে রটে গেছে গান্ধীজি নাকি মদ্যপান করে! তার পাদদেশে পাওয়া গেছে দুটি ব্লেন্ডার্স প্রাইডের বোতল। বেদির তলদেশে পাওয়া গেছে কয়েকটি শূন্য বোতল মোদের এবং জলের।

ইউনেস্কো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম উৎসব বাংলার দুর্গোৎসব-শারদ উৎসব এসব ঘোষণা করে দিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দিকে ইউনেস্কোর তীব্র নজর। প্রয়োজনে তারা গ্যালিলিওর দূরবীন ব্যবহার করে পৃথিবীর কুমেরু সুমেরু উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু এসব মেরুর দেশগুলি নাকি দেখতে পায়! আমার অবশ্য ভূগোল সম্বন্ধে অতো জ্ঞান নেই।

আজ শুনি ইউনেস্কো বিশ্বের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গ দুনিয়ায় সেরা চোরের রাজ্য বলে সম্মানে ভূষিত করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জীবনানন্দের পংক্তিকে অনুসরণ করে এবং তাকে মর্যাদা দিয়ে তারা লিখেছে, আবার আসিব ফিরে এই কল্লোলিনী তিলোত্তমা বাংলায় গাঙ্গেয় নদীতীরে। এইবার বক শালিক নয় ফিরিয়া আসিব চোরের পোশাক পরে নিস্তেল অন্ধকারে নয়,দৃপ্ত পদক্ষেপে আলোর প্রহরে….
প্লাকার্ড হাতে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে, আমরা সবাই চোর এই সততার রাজত্বে!