সেদিন কি হয়েছিল?
সেদিন ডেড বডি নয়, হাসপাতাল থেকে ডিনামাইট কাঁধে করে বেরিয়েছিল ফ্যাতাড়ু বাহিনী।
তমাল সাহা
আজ ৩১ জুলাই,২০১৪ গ্রাউন্ড জিরো থেকে বলছি।
স্লোগান উঠেছে–‘লাল সেলাম চলবে না’। ‘লাল সেলাম চলবে না’।
ব্রাউন শার্টরা আগেভাগেই নেমে পড়েছিল ময়দানে। তারা বুঝেছিল শেষ যুদ্ধ আসন্ন। এই তো সময়। এই মহান টেররিস্টের দেহ তারা কাজে লাগাবে। বামপন্থী লড়াইয়ের মেজাজকে তারা বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকা থেকে হটিয়ে দেবে।
তারা জানেনা রেড লাইট এরিয়া, ফ্লাইওভারের নিচের চাতাল, খালধারের বস্তি, ফুটপাতের ঝোপড়ি, ইস্টিশানের প্রান্তিক অঞ্চল, বাস টার্মিনাস, ট্রাম ডিপোর অন্ধকারে যাদের রাত্রিবাস তারা রেডি হয়ে আছে।প্রয়োজনে তারা হিট এন্ড রান পদ্ধতি অথবা গেরিলা নীতি প্রয়োগ করবে।
ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে তখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি।গেস্টাপোরা শাসন ক্ষমতায়। তারা হাসপাতাল চত্বর সাজিয়ে দিয়েছিল ‘স্বস্তিক’ চিহ্ন আঁকা পতাকায়। জার্মানিতে যেটা স্বস্তিক এখানে সেটা ঘাস ফুলের রূপান্তরিত হয়ে গেছে। তারা
জানিয়ে দিয়েছিল এটাই তাদের দখলদারির নিশানদিহি। তারা মনে করেছিল ‘হাজার চুরাশির মা’ যখন এই নবতিপর বয়সে সেই ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসে টলিউড মেলা ও স্টর্মটুপার্সদের জনসমুদ্র দেখে মুগ্ধ, তখন তার গর্ভজাত এই সন্তানের হিমালয়ের মতো ভারি দেহটিতে তাদেরই একমাত্র মালিকানা, তারাই এর স্বত্বাধিকারী। তারা মনে করেছিল শাসকের স্তাবক- দালাল- উমেদার শিল্পী সাহিত্যিকদের মতো যাকে জীবিত অবস্থায় উত্তরীয়- শাল- দু’লক্ষ টাকার বিভূষণ দিয়ে বাজারি পণ্য করা যায় নি, মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল দেহ হাইজ্যাক করে রাষ্ট্রীয় উল্লাসে করণীয় কর্তব্যে মাতবে মানে গান স্যালুটে শাসকীয় মর্যাদায় পাবলিক শো করবে।
তখন হঠাৎ করে যেন মৃতদেহটি নড়ে উঠে বললো, গাঁড় মারি তোর গান স্যালুটের!
তাই তাঁর অন্তিম শ্বাসপতনের সংবাদ নিয়ে বাতাস যখন ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের গর্জনে দিক থেকে দিগন্তে উড়ে গেল তখন তাঁরই হাতের তৈরি কাঙাল মালসাট বাহিনী ও ফ্যাতাড়ু ফৌজ বেরিয়ে এলো শহরের আনাচ কানাচ, গলি খুঁজি বস্তি ও শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে, স্লোগান তুলল– নবারুণ ভট্টাচার্য লাল সেলাম, নবারুণ ভট্টাচার্য অমর রহে।
এই মহান দৃশ্য দেখে ব্রাউন শার্টরা বললো– স্টপ ইট। এক রাজনীতিক ঠিকেদার বুকের ভয় গোপন রেখে হুকুম জারি করলো– ‘লাল সেলাম’ বলবেন না। উনি কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। মা-মাটি-মানুষের কাদা লাগানো এই মাতব্বর লোকটির আচরণ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, নবারুণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে এর কোন ধারণাই নেই। আমৃত্যু বামপন্থী এই সাহিত্যিকের কোনো রচনাই সে পড়েনি। এর জ্ঞানগম্যি কালিঘাট পর্যন্ত। সে তার মস্তানি হুকুমদারি নিয়ে বেশিদূর এগোতে পারেনি।
নবারুণ বাহিনীর মারকুটে কর্মীরা তার সমস্ত তড়পানি রুখে দিয়েছে আর কাঙাল মালসাটেরা তখন মালকোঁচা মেরে তৈরি। ফ্যাতাড়ুরা আকাশে উড়ে গিয়ে সেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ফলে পালিয়ে যেতে হয়েছে এই বঙ্গজ নয়া নীল-সাদা নেতা ও তার স্যাঙাতদের।
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ‘নবারুণ ভট্টাচার্য অমর রহে’ স্লোগান তুলে নবারুণ ফৌজ মার্চ পাস্টের মেজাজে এগিয়ে চলেছে। এই দৃশ্য দেখেছে কলকাতার রাজপথ।