অবতক খবর,২৬ অক্টোবর,বাঁকুড়া:- সোনামুখীর লালবাজারের হট্-নগর কালীর ৩০০ বছরের ইতিহাস। কেন হট্-নগর কালীর নামকরণ দেখুন আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।
দক্ষিণবঙ্গের এক সুপ্রাচীন জনপদ হলো সোনামুখী। যা কালি এবং কার্তিকের শহর নামে পরিচিত।আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে এই শহর ছিল ঝোপ এবং জঙ্গলে পরিপূর্ণ,শহরের অলিগলিতে সেভাবে গোড়ে ওঠেনি জনমানবের বসবাস। আজকের জনপদ সেই সময় জনগণ শূন্য হলেও একটা সুপ্রাচীন ইতিহাস বহন করে নিয়ে চলত,কালী পুজোর ইতিহাস। এই ব্যস্ত শহরেই , শহুরে জীবনের পাশে একটা ইতিহাস লুকিয়ে আছে,সেই ইতিহাস আজ আপনাদেরকে বলবো।
একটা সময় এই প্রাচীন জনপদের বাসিন্দাদের আর্থিক অনটন ছিল চরমে।সেই সময় পরিবারের মুখে অন্নসংস্থান করতে সোনামুখীর আদি বাসিন্দা সূত্রধর পরিবারের এক বিধবা রমণী চিঁড়ের ফেরি করতে ঘুরে বেড়াতো এদিক সেদিক।একদিন বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় চিঁড়ের ফেরি করতে গিয়ে সেই রমণীর সাথে পথে হঠাৎই দেখা হয় এক অতীব সুন্দরী বাচ্চা একটি মেয়ের।সেই বাচ্চা মেয়ে এই সূত্রধর রমণীকে প্রতিদিন বারবার কাতর আর্জি জানায় আমাকে নিয়ে চলো তোর সাথে তোর গ্রামে ক্লান্ত বয়স্ক মহিলা কিভাবে বাচ্চাটাকে নিয়ে আসবে সাথে থাকতো চিঁড়ের ঝুড়ি , সূত্রধর বিধবা রমণী প্রতিদিন বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলেও,বাচ্চা মেয়েটির বারবার কাতর আর্তি তাকে বাধ্য করেছিলো তাকে সাথে করে নিয়ে আসার জন্য।সূত্রধর সেই রমণী বাচ্চাটিকে বলে ‘চল তোকে আমি আমার ঝুড়ি করেই নিয়ে যায়’।এতদুর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু যখনই বাচ্চা মেয়েটিকে ঝুড়ি করে মাথায় নিয়ে সোনামুখী জনপদে ওই সূত্রধর রমণী পৌঁছলো তখনই বাঁধল এক বিপত্তি,সেই রমণী দেখলো ঝুড়িতে আর বাচ্চা মেয়েটি নেই আছে কেবল মাত্র একটি প্রস্তরখণ্ড।কাছাকাছি একটি আঁকড় গাছের তলায় সেই প্রস্তরখন্ডটিকে নামিয়ে রাখে ওই সূত্রধর রমনী।সেই সময় সেই আঁকড় গাছের নিচে হট সাধু নামে এক যোগী বসবাস করতেন। সেই হট সাধু একদিন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান,যে এই প্রস্তরখন্ডটিকে মাতৃরুপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দিতে হবে প্রাণ। ঠিক তখন থেকেই ওই আকর গাছের তলায় কালী মায়ের পুজো হট্-নগর কালী নামে , অতঃপর ঘটলো আরেক ঘটনা সোনামুখীর তৎকালীন জমিদারের গিন্নিও পেলেন মায়ের স্বপ্নাদেশ তার ঠিক পাশেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মায়ের নির্দেশমতো জমিদার গিন্নি নিজেদের জমি দান করে তৈরি করলেন মায়ের সুবিশাল মন্দির ।
আজও একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সেই আঁকড় গাছ এবং সেই প্রস্তরখণ্ড বিদ্যমান একইভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী পূজিত হয়ে আসছে মাতৃরূপী ঐ প্রস্তরখণ্ড।প্রথমে প্রস্তরখন্ড পূজিত হওয়ার পর তারপরে প্রতিষ্ঠিত মায়ের মন্দিরে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা,আজও সূত্রধর পরিবারের বংশধরেরা মায়ের ঘট প্রতিষ্ঠা এবং বিসর্জনের কাজ করে থাকেন।
বাংলা মায়ের বুকে চরৈবেতিতে গেলে এরকম অনেক ইতিহাস আমাদের ধরা দেয়।সেই ইতিহাসের সত্যতা বা মিথ্যা বিচার করার ব্যাপারের থেকেও যে বিষয়টি সামনে আসে তা হল আবেগ।ইতিহাসের কোন সংযোজন হয় না,ঘটে না কোন অভিযোজনও, ইতিহাস ইতিহাসের মতই রয়ে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম।