অবতক খবর,৬ এপ্রিল: আজ বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে প্রয়াত হলেন বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক নির্ঝরিনী চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন সিপিএমের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী এবং সদস্য। তিনি দীর্ঘ তিন-চার বছর ধরে নার্ভের রোগে ভুগছিলেন। তিনি বিকলাঙ্গ অবস্থায় অসুস্থ ছিলেন। দীর্ঘ কষ্ট ভোগের পর আজ তিনি প্রয়াত হন।
নির্ঝরিণী চক্রবর্তী জীবন সংগ্রামের প্রতীক। ক্রমাগত জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবনের উত্তরণ ঘটেছে। তিনি কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপাল পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। ছাত্রী অবস্থা থেকেই সেই স্কুলের দপ্তরি, দপ্তরি থেকে করণিক পরবর্তীতে শিক্ষক, আরো পরবর্তীতে অধ্যাপিকা থেকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার হিসেবে এশিয়ার বৃহত্তম কলেজ, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ, সেই কলেজের প্রাতঃকালীন অধ্যক্ষাতে উত্তীর্ণ করেছেন নিজেকে। তিনি দক্ষিণাঞ্চল স্কুল সার্ভিস কমিশনের সদস্যা হয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদিকা ছিলেন।
জেলা সেক্রেটারির সকলেই একমেবাদ্বিতীয়ম জগদীশ দাসকে মনোনীত করে পাঠিয়ে ছিলেন রাজ্যস্তরে ২০০৬ সালে বিধানসভার প্রার্থী হিসেবে। রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস, জেলা সম্পাদক অমিতাভ বসুকে জানিয়ে দেন যে পার্টি সাধারণভাবে যে মনোনয়ন বিধি প্রচলন করেছে তা বীজপুরের ক্ষেত্রেও অনিবার্যভাবে প্রযোজ্য হবে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সেক্রেটারিয়েট বাধা হয়ে দাঁড়ালো জগদীশ দাসের বয়স। ফলত নতুন মুখ আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ালো বীজপুরের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জীর নাম উঠে এলো। জেলাস্তরে সাধারণভাবে দুজন করে মুখ মহিলা প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন। দমদমে প্রার্থী হয়েছেন রেখা গোস্বামী, আর একটি ক্ষেত্রে মহিলা প্রার্থী হয়েছেন বীজপুরের নির্ঝরিণী চক্রবর্তী।
শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে বিজপুর বিধায়ক হিসেবে মনোনীত হন নির্ঝরিনী চক্রবর্তী। জনসাধারণের আস্থা অর্জনের জন্য শিক্ষা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্ঝরিণী দেবীকে পার্টির ভাবমূর্তি রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য মনোনয়ন দেবার কৌশল গ্রহণ করে সিপিএম পার্টি।
নির্ঝরিণী দেবী কাঁচরাপাড়ার ভূমিকন্যা। তাঁর শ্রমনিষ্ঠ জীবন, জীবন সংগ্রামের লড়াই তাঁকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় মানুষ স্বীকৃতি দেবে এই যুক্তিতে তিনি মনোনয়ন পেয়ে যান।
২০০৬ সাল এবং ২০১১ সালে তিনি বীজপুর বিধানসভার বিধায়ক রূপে এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেত্রী হিসেবে জয়ী হন। একই স্কুলের ছাত্রী সেই স্কুলের পিওন, সেই স্কুলের শিক্ষয়িত্রী, পরবর্তীতে অধ্যাপিকা এবং নৈহাটি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ অর্থাৎ বন্দেমাতরমের ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের নামাঙ্কিত কলেজের প্রাতঃবিভাগের অধ্যক্ষা হিসেবে নিজের জীবনকে উন্নীত করেছিলেন বিধায়ক নির্ঝরিণী চক্রবর্তী। তিনি কাঁচরাপাড়ার ভূমিকন্যা। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি জীবনকে জাগ্ৰত রেখেছিলেন,এটি একটি দৃষ্টান্ত।
এ বিষয়ে কাঁচরাপাড়ার বরিষ্ঠ সিপিএম নেতা শম্ভু চ্যাটার্জী জানান যে আমি শোক স্তব্ধ হলেও আমি আজ গর্বিত। কারণ এমন একটি ব্যক্তিত্বপূর্ণ নারী আমার মা সবিতা চ্যাটার্জী, যিনি সিপিএমের মহিলা সংগঠনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন নির্ঝরিণী চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের বাড়ির পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কারণ কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপাল পলিটেকনিক হাই স্কুল। এই স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন আমার দিদি ছায়া চ্যাটার্জী, নির্ঝরিণী চক্রবর্তী তাঁর ছাত্রী ছিলেন। সুতরাং আজ তাঁর এই মৃত্যু সংবাদে আমরা শোকাহত। কাঁচরাপাড়ার রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন এটা একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সংসদীয় রাজনীতিতে এইভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ, মানুষকে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।