আমার যুদ্ধ বিরোধিতা
হেমন্ত ঘুম
তমাল সাহা
ফালতু বকবক করিস না। হেমন্ত এসেছে। হিম পড়বে। গাছের পাতা ঝরবে।এটাই স্বাভাবিক। এসবই মধ্যবিত্ত গীতিকা!
ওসব আমার কাছে জলভাত হয়ে গিয়েছে। শরীরের শিরা-উপশিরা হৃৎপিণ্ড চোখ কান মুখ সবই খোলা আছে। তাতে কি? আমি তো মরে যাইনি। এখনো মানুষ আছি।
জানিস গাজায় কত মানুষ মরেছে, কত ঘর বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল মহেঞ্জোদারো হয়ে গেছে।
মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে এদিক-ওদিক পালাচ্ছে!
বন্ধু দেখলো, এত কথা এতেও আমার সম্বিত ফিরল না। হাসপাতাল স্কুল মহেঞ্জোদারো কোন শব্দতেই আমার কোন বিকার নেই। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।
বন্ধু তো নাছোড়। কত শিশু মরেছে জানিস, কত নারী নির্যাতন হয়েছে?
একটু থেমে বলল, গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফাতেই এক ১৭৯ জনের গণকবর দেওয়া হয়েছে। ভাবতে পারিস হাসপাতালই গণকবরের চত্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে! ৩৯ টি সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর মুখে! হাসপাতালের গেটের বাইরে যুদ্ধট্যাংক সার সার দাঁড়িয়ে
আছে। মেশিনগান হাতে প্রস্তুত স্নাইপার ফোর্স!
ও মনে করলো শিশু ও নারীর কথা বললে আমি খুব গলে যাব। আমার হৃদয়খণ্ড তুলতুলে মাখনের মতো হয়ে যাবে।
আমি বলি, ও সব মৃত্যু, ঘরপালানো আমি অনেক দেখেছি সত্তর দশকে। ফায়ারিং স্কোয়াড, থার্ড ডিগ্রি জেলে পিটিয়ে মারা, মাথা কেটে নেওয়া ওসব আমার সহ্য হয়ে গিয়েছে। আমি পোড়খাওয়া মানুষ।
তাহলে মানুষ মরতেই থাকবে? সাম্রাজ্যবাদীরা, উপনিবেশবাদীরা একটার পর একটা দেশের ওপর অভিযান চালাবে, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে
এসব হতেই থাকবে?
আমি বলি, দুর্গাপুজো হবে, লক্ষ্মীপুজো হবে, কালীপুজো হবে, ধনতেরাস হবে, ভূত চতুর্দশী হবে, দিওয়ালি হবে, বই লিখবে অমর্ত্য সেনরা অর্থনীতির বই, লিখবে দারিদ্র্য দূরীকরণের কথা বলবে, ৭২ টা রাজনৈতিক দল থাকবে। গরিবের রেশনের চাল মেরে দেবে, কাটমানি খাবে, প্রজন্মদের পথে বসিয়ে রাখবে, দুর্নীতি হবে, যুদ্ধও হবে, ফুর্তিও হবে, শীতে বইমেলা হবে, শরতে রাজনৈতিক বুক স্টল হবে– এতো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা!
বন্ধু বলে, তাহলে তুই কিছু করবি না?
ধুর! আমার কিচ্ছু করার ইচ্ছে নেই। গোল গলার দুটো টি-শার্ট কিনে রেখেছি একটাতে চে গেভারা,না চে গুয়েভারা-র ছবি আছে, শুদ্ধ নাম,বানান কোনটাই জানিনা। আরেকটা এই নতুন কিনলাম। এই সেদিন দক্ষিণাপণ থেকে মেয়ে কিনে নিয়ে এনে দিয়েছে। গেঞ্জির উপর লেখা– ফ্রি প্যালেস্টাইন।
একদিন যুদ্ধ বিরোধী মিছিল হবে শুনছি কলকাতায়, বামপন্থীরা করবে। সেখানে যাব। যাবার সময় গায়ে দেব ফ্রি প্যালেস্টাইন গেঞ্জিটা। ফেরার সময় চে-র ছবি লাগানো গেঞ্জিটা গায়ে দিয়ে বাড়ি ফিরব।